
জকিগঞ্জে ছাত্র জনতার তোপের মুখে উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির মাসিক সভাস্থল ত্যাগ করলেন দুই আওয়ামী লীগ নেতা। বুধবার (৩০অক্টোবর) সকাল ১১ টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসনিম-এর সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আইনশৃংখলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। আইনশৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের উপস্থিতি লক্ষ করে আগের রাতেই অনলাইন গণমাধ্যম ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দেখা দেয় ছাত্রজনতার মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পরদিন আইনশৃংখলা কমিটির মাসিক সভা শুরু হওয়ার পূর্ব থেকেই অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা।
সভায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত বীরশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুছ ছাত্তার ও বারঠাকুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিভাকর দেশ মূখ্যকে উপস্থিত দেখে ছাত্রজনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তোপের মূখে আব্দুছ ছাত্তার ও বিভাকর দেশ মূখ্য সভাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
পরে উত্তেজিত ছাত্রজনতা উপজেলা অডিটোরিয়ামের সামনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেইম প্লেট ভেঙ্গে ফেলে এবং বিভিন্ন দপ্তরে অভিযান পরিচালনা করে। জকিগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে পুরাতন লুঙ্গি দিয়ে ঢেকে রাখা শেখ হাসিনার নেমপ্লেট ও স্থানীয় নওয়াবাজার গণিপুর ভূমি অফিসের সামনে থেকে শেখ হাসিনার নেমপ্লেট ভেঙ্গে ফেলে।বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা হোসেন আহমদ ও জাফর আহমদ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো সক্রিয়। এদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে যেখানে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার দোসরদের পাওয়া যাবে সেখানেই ছাত্রজনতা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। ৭১-এর প্রথম মুক্তাঞ্চল জকিগঞ্জ হবে ২৪-এর প্রথম ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশ।
জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুশ শহীদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অবৈধ নির্বাচনে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানরা ইউনিয়ন পরিষদে না আসার কারণে চরম ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউপি পরিষদে অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের অপ্রসারণ করে পরবর্তী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করে জনদূর্ভোগ নিরসনের আহবান জানান।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমদ বলেন, ১৫’শ ছাত্রজনতার শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। কয়েক হাজার পঙ্গু ভাই-বোনের আর্থনাদের ফসল নতুন বাংলাদেশ। এখনো হতাহতদের রক্তের দাগ শুকায়নি। এ দেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের ধৃষ্টতা মেনে নেয়া যাবে না। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের গণসংগঠন আওয়ামী লীগের লোকেরা সমন্বয় সভায় আসার সুযোগ কীভাবে পেলো তা তদন্ত করে দেখার দাবী জানান তিনি।
ছাত্রজনতার তোপের মূখে আওয়ামী লীগ নেতাদের আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভাস্থল ত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসনিম বলেন-সভার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বিরশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুছ ছাত্তার ও বিভাকর দেশ মূখ্য সভাস্থল ত্যাগ করেন। পরে উত্তেজিত ছাত্রজনতা উপজেলা পরিষদ এবং আরো বিভিন্ন দপ্তরে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেইম প্লেট ভেঙ্গে ফেলে। সরকার পতনের পর থেকে ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৫ জন চেয়ারম্যানের উপর মামলা থাকায় তারা মাসিক সভায় উপস্থিত থাকেন না।
এসময় আইনশৃংখলা কমিটির সভায় জকিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক অর্ণব দত্ত, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মুমিন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) এস.এম. মাহমুদ হাসান রিপন, বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, খলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক, কসকনকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মঈনসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর প্রধান ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।